ঋণগ্রহীতার পরিশোধ
পরিশোধের অর্থ
- “পরিশোধ” মানে হলো ঋণের বাধ্যবাধকতা প্রতিপালনসংশ্লিষ্ট একটি কর্ম। ভোক্তা অর্থঋণ চুক্তি’র অনুযায়ী পরিশোধের মানে হলো, ঋণদাতাকে তার কাছ থেকে নেয়া ঋণের অর্থ ফেরত দেয়া।
পরিশোধের প্রস্তাব
- ঋণ বাধ্যবাধকতার অভিপ্রায়ের সঙ্গে কঠোর সঙ্গতি রেখে প্রকৃত প্রস্তাবের মাধ্যমে পরিশোধ কার্য সম্পদান করতে হবে। (দেওয়ানি আইনের ধারা 460)
· তবে, ঋণদাতা যদি কোন আগাম পরিশোধ গ্রহণ করতে অস্বীকৃতি জানায় বা ঋণদাতার কোন কাজের কারণে পরিশোধ করার প্রয়োজন হয়ে পড়ে তাহলে ঋণগ্রহীতার জন্য ঋণদাতাকে একটি অবশ্য পালনীয় বিজ্ঞপ্তি পাঠানোই যথেষ্ঠ হবে যে ঋণগ্রহীতা পরিশোধে ইচ্ছুক এবং পরিশোধের জন্য প্রস্তুত। (দেওয়ানি আইনের ধারা 460)
- পরিশোধের প্রস্তাব ঋণগ্রহীতাকে ওই প্রস্তাবের সময় থেকে তার ঋণের বাধ্যবাধকতা প্রতিপালন না করার দায় থেকে মুক্তি দেবে। (দেওয়ানি আইনের ধারা 461)
পরিশোধের স্থান
- পরিশোধের স্থানের ব্যাপারে চুক্তিবদ্ধ পক্ষগুলোর মধ্যে কোন সিদ্ধান্ত না থাকলে, ঋণদাতার বর্তমান ঠিকানায় পরিশোধ করতে হবে। তবে বাণিজ্যিক লেনদেনের সঙ্গে যুক্ত পরিশোধের ক্ষেত্রে পরিশোধ করতে হবে ঋণদাতার ব্যবসায়িক ঠিকানায়। (দেওয়ানি আইনের ধারা 467-(2))
পরিশোধের ব্যয় বহন
- পক্ষগুলোর মতৈক্যের ভিত্তিতে অন্য কিছু উল্লেখ করা না থাকলে, ঋণগ্রহীতা পরিশোধের ব্যয় বহন করবেন। তবে, ঋণদাতার ঠিকানা পরিবর্তন বা তার অন্য কোন কাজের কারণে যদি পরিশোধ ব্যয় বেড়ে যায় তাহলে ওই বর্ধিত ব্যয় ঋণদাতাকে বহন করতে হবে। (দেওয়ানি আইনের ধারা 473)
· উদাহরণস্বরূপ, পরিশোধ ব্যয়ের মধ্যে রেমিটেন্স-এর জন্য ব্যাংক ফি এবং ঋণগ্রহীতার অন্য যেকোন ভ্রমণ ব্যয়, যদি তাকে পরিশোধের জন্য বুসান থেকে সিউল যেতে হয়।
যিনি পরিশোধ করবেন আর যিনি পরিশোধ গ্রহণ করবেন
তৃতীয় কোন পক্ষ পরিশোধ করতে পারে
- যে কোন তৃতীয় পক্ষ ঋণ পরিশোধের কাজ করতে পারে। তবে, পক্ষগুলোর মধ্যে স্বাক্ষরিত চুক্তিতে যদি ওই ধরনের পরিশোধের অনুমতি না দেয়া হয় তাহলে তৃতীয় পক্ষ কোন পরিশোধ করবে না। (দেওয়ানি আইনের ধারা 469-(1)
- ঋণ বাধ্যবাধকতায় কোন স্বার্থ নেই এমন কোন তৃতীয় পক্ষ ঋণগ্রহীতার ইচ্ছার বিরুদ্ধে পরিশোধ নাও করতে পারে। (দেওয়ানি আইনের ধারা 469-(2)
· ঋণ দায়বদ্ধতায় স্বার্থ রয়েছে এমন কোন যৌথ গ্যারান্টর বা কোন বন্ধকগ্রহীতা ঋণগ্রহীতার ইচ্ছার বিরুদ্ধে পরিশোধ করতে পারেন।
তৃতীয় কোন পক্ষকে পরিশোধ
- মালিকানার দাবিদার এমন কারো কাছে পরিশোধ তখনই কার্যকর হতে পারে যদি তিনি তা সরল বিশ্বাসে এবং কোনরকম অবহেলা ছাড়াই করে থাকেন। (দেওয়ানি আইনের ধারা 470)
- কোন রশিদবাহক পরিশোধ গ্রহণ করার জন্য ক্ষমতাপ্রাপ্ত না হলেও তার কাছে পরিশোধ কার্যকর বলে গণ্য হবে। তবে যিনি পরিশোধ করছেন তিনি যদি এই কর্তৃত্বের ব্যাপারে অবহিত থাকেন বা তার জানা থেকে থাকে তাহলে আগের বিধান প্রযোজ্য হবে না। (দেওয়ানি আইনের ধারা 471)
- কোন মালিকানার দাবিদার এবং কোন রশিদবাহকের কাছে পরিশোধের ঘটনা ছাড়া, পরিশোধ গ্রহণ করার কর্তৃত্ব নেই এমন কোন ব্যক্তির কাছে পরিশোধ করা হলে তা কেবল তখনই কার্যকর হবে যদি এতে ঋণদাতা উপকৃত হন। (দেওয়ানি আইনের ধারা 472)
নির্দিষ্ট তারিখের আগে পরিশোধ
নির্দিষ্ট তারিখের আগে পরিশোধ
- পক্ষগুলোর মধ্যে সম্মতির ভিত্তিতে সুনির্দিষ্টভাবে অন্যকিছু উল্লেখ না থাকলে, ঋণগ্রহীতা নির্দিষ্ট তারিখের আগে পরিশোধ করতে পারেন। তবে, আগাম পরিশোধের কারণে ঋণগ্রহীতা যদি ক্ষতিগ্রস্ত হন, ঋণগ্রহীতা ওই ক্ষতির হাত থেকে নিরাপদ থাকবেন। (দেওয়ানি আইনের ধারা 468)
- ঋণগ্রহীতা নির্দিষ্ট তারিখের আগে পরিশোধ করেছেন এমন ক্ষেত্রে, ভোক্তা ভোক্তা অর্থঋণ চুক্তির আওতায় নির্দিষ্ট তারিখের আগে এ ধরনের পরিশোধ করা হলে, যে তারিখে পরিশোধ করা হলো তার পরবর্তী সময়ে যে সুদ অর্জিত হতো তা থেকে ঋণদাতা বঞ্চিত হবেন।
ঋণের আংশিক পরিশোধ দ্বারা আংশিক দায়শোধ
আংশিক দায়শোধের উদ্দেশ্য
- একই ঋণদাতার কাছে ঋণগ্রহীতার যখন এমন অনেকগুলো বাধ্যবাধকতা থাকে যেগুলো বিষয় একই প্রকৃতির তখন (দেওয়ানি আইনের ধারা 476), অথবা ঋণগ্রহীতা যখন এক বা একাধিক ঋণের মূল অর্থের বাইরে কোন ব্যয় এবং/বা সুদ পরিশোধে বাধ্য থাকেন তখন এই “আংশিক দায়শোধে”র প্রশ্ন উঠে। (দেওয়ানি আইনের ধারা 478 ও 479)। তবে, উপরোক্ত পরিস্থিতিতে ঋণ বাধ্যবাধকতার কোনটি প্রতিপালিত হয়েছে সে প্রশ্ন উঠতে পারে।
- পক্ষগুলোর মধ্যে চুক্তি অনুযায়ী আংশিক দায়শোধ করা যেতে পারে। তবে, পক্ষগুলোর মধ্যে এমন কোন চুক্তি না থাকলে কোন বাধ্যবাধকতাটি প্রতিপালিত হয়েছে সে ব্যাপারে ক্ষমতাপ্রাপ্ত কোন ব্যক্তি সিদ্ধান্ত নিতে পারেন, এবং সেখানে এ ধরনের কোন সিদ্ধান্ত না থাকলে তা আইনে উল্লেখিত ধারাক্রম অনুযায়ী করা হবে।
ব্যয়, সুদ, এবং ঋণের মূল অংক পরিশোধের ধারাক্রম
- ঋণের আংশিক দায়শোধ করা হবে এমনটা হলে ঋণদাতা ও ঋণগ্রহীতা আগেভাগে ব্যয়, সুদ, এবং ঋণের মূল অংক পরিশোধের ধারাক্রমের ব্যাপারে সম্মত হতে পারেন।
- এমন কোন ক্ষেত্র যেখানে ঋণগ্রহীতা এক বা একাধিক ঋণ বাধ্যবাধকতার জন্য সংশ্লিষ্ট ব্যয় ও জমা হওয়া সুদ বহন করে থাকেন, পক্ষগুলো অন্যরকম কোন সিদ্ধান্ত না নিলে, দায়শোধের ধারাক্রম হবে: ব্যয়, সুদ ও ঋণের মূল অংক। (দেওয়ানি আইনের ধারা 479-(1))
- ব্যয়, সুদ ও ঋণের মূল অংক দায়শোধের ব্যাপারে বিস্তারিত ধারাক্রম নিম্নলিখিত বিধিবদ্ধ আদেশ অনুযায়ী হবে। (দেওয়ানি আইনের ধারা 477 ও 479-(2))
· এমন যদি হয় ঋণ বাধ্যবাধকতার কিছু বকেয়া হয়েছে, আর কিছু হয়নি। তাহলে যেসব ঋণ বাধ্যবাধকতা প্রতিপালন বকেয়া হয়েছে সেগুলোর দায়শোধ করতে হবে।
· যদি ঋণ বাধ্যবাধকতার সবগুলো বকেয়া হয় অথবা কোনটিই বকেয়া না হয়, ঋণ বাধ্যবাধকতা পূরণের জন্য কোন দায়শোধটি ঋণগ্রহীতার জন্য অধিকতর লাভজনক তা দেখতে হবে।
· ঋণগ্রহীতার জন্য সবগুলোই যদি একই রকম লাভজনক হয় তাহলে যে বাধ্যবাধকতাটি সবার আগে বকেয়া হচ্ছে বা হবে তার দায়শোধ করতে হবে।
· উপরে উল্লেখিত ধারাক্রমের ক্ষেত্রে, প্রতিটি বাধ্যবাধকতার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অর্থের অনুপাতে দায় শোধ করতে হবে।